ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৯ রানে বাংলাদেশ পরাজিতসংবাদচর্চা ডেস্ক:
ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন এবারও পূরণ হলো না বাংলাদেশের। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭৯ রানে হেরে সে স্বপ্ন অধরাই রইলো টাইগারদের।
শনিবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারক ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কা নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২১ রান করে। জবাবে ৪১ ওভার ১ বলে ১৪২ রানে নয় উইকেট হারায় স্বাগতিক শিবির। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়া সাকিব আল হাসান আর ব্যাট করতে পারেননি।
২২২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় ১১ রানে লঙ্কান পেসার দুশমান্থা চামিরার বলে উঠিয়ে মারতে গিয়ে ধনাঞ্জয়ার ক্যাচ হয়ে ফেরেন ওপেনার তামিম ইকবাল।
১৮ বল খেলে তিন রান করে পুরো সিরিজে দুর্দান্ত খেলা এ বাঁহাতি। তামিমের পর রান আউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিওনে ফেরেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ মিঠুন। ২৭ বলে একটি ছক্কায় ১০ রান করেন তিনি।
চামিরার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ব্যক্তিগত দুই রানে আউট হন সাব্বির রহমান। অন সাইডে শট খেলতে গিয়ে গুনারত্নের ক্যাচে পরিণত হন সাব্বির।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে দলকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তবে দলীয় ৮০ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২২ রানে আকিলা ধনাঞ্জয়ার বলে থারাঙ্গাকে ক্যাচ দিলে টাইগারদের চতুর্থ উইকেটের পতন হয়। ৪০ বল মোকাবেলা করে একটি চার হাঁকান তিনি।
মুশফিকের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ধনাঞ্জয়ার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ব্যক্তিগত পাঁচ রানে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন। দলীয় ১২৭ রানে রান আউট হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ২৯ বলে আট রান করেন তিনি।
৪০তম ওভারে পর পর দুই বলে মাশরাফি ও রুবেলকে তুলে নিয়ে সফরকারী শ্রীলঙ্কাকে জয়ের দিকে এগিয়ে নেন পেসার মাদুশাঙ্কা। মাশরাফিকে মেন্ডিসের ক্যাচ ও রুবেলকে বোল্ড করেন তিনি।
দলের একমাত্র হাল ধরে খেলা মাহমুদউল্লা রিয়াদ চেষ্টা করে যান। তবে ৪২তম ওভারে মাদুশাঙ্কার বলে থারাঙ্গাকে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফিরলে শেষ হয় বাংলাদেশে ইনিংস। ৯২ বলে ছয়টি চার ও তিনটি ছক্কায় ৭৬ করেন তিনি।
এর আগে টসে জিতে মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথমবার একাদশে সুযোগ পাওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ। উঠিয়ে মারতে গিয়ে লং-অফে তামিম ইকবালের হাতে ধরা পড়েন দানুশকা গুনাথিলাকা (৬)। ৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় লঙ্কানরা। বিপদজনক হয়ে ওঠা কুশল মেন্ডিসকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানিয়ে সতীর্থদের উদযাপনের মধ্যমণি বনে যান অধিনায়ক মাশরাফি।
শুরুর ধাক্কা সামলে থারাঙ্গা-ডিকভেলা জুটিতে রানের চাকা সচল রাখে লঙ্কানরা। দু’জনের ৭১ রানের পার্টনারশিপ ভেঙে মূল্যবান ব্রেকথ্রু এনে দেন একাদশে ফেরা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। সাব্বির রহমানের ক্যাচবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন নিরোশান ডিকভেলা (৪২)। দলীয় ১১৩ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে।
মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শিকারে ১৫৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে লঙ্কানরা। ক্লিন বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন দলীয় সর্বোচ্চ রান করা ওপেনার উপুল থারাঙ্গা (৫৬)। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে এটি মোস্তাফিজের ৫০তম উইকেট (২৭তম ম্যাচ)। যা বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে দ্রুততম।অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালের সঙ্গে থারাঙ্গার চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৪৫।
প্রতিপক্ষের টানা চারটি উইকেট তুলে নেন রুবেল হোসেন। তামিমের ক্যাচ বানিয়ে হার্ডহিটার থিসারা পেরেরাকে দুই রানে ফেরান তিনি। ডানহাতি এ পেসারের দ্বিতীয় শিকারে ১৮২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে লঙ্কানরা। আসেলা গুনারত্নেকে ব্যক্তিগত ছয় রানে এলবির ফাঁদে ফেলেন তিনি। পরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালকে ৪৫ রানে বোল্ড করেন। ব্যক্তিগত ৭ রানে থাকা শেহান মাদুশাঙ্কাকেও বোল্ড করেন তিনি।
ইনিংসের শেষ বলে সুরাঙ্গা লাকমাল রান আউট হন। উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের থ্রোতে স্ট্যাম ভাঙে তার।
রুবেলের চার উইকেটের পাশাপাশি দুটি উইকেট পান মোস্তাফিজুর রহমান। একটি করে উইকেট দখল করেন মেহেদি হাসান, মাশরাফি ও সাইফ।
ম্যাচসেরা হয়েছেন উপল থারাঙ্গা আর সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন কুশল পেরেরা।